শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে আজকাল চাকরি জোটানো দায়। সঙ্গে অভিজ্ঞতার সনদও থাকা চাই। বলতে পারেন পড়াশোনা শেষে চাকরি পেলে তবেই তো হবে ‘অভিজ্ঞতা’! কিন্তু এমন কিছু পেশাগত কোর্স রয়েছে, যা আপনাকে নিয়ে যাবে অভিজ্ঞদের কাতারে। তেমনি একটি কোর্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা সিএ। হিসাববিদ্যায় যা আন্তর্জাতিক মানের পেশাগত সনদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাগত এই ডিগ্রি দিয়ে থাকে আইসিএবি। দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এই সনদ প্রদান করে। সিএ সম্পর্কে দশটি বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আইসিএবির সদস্য ওয়াহাব আকন্দ।
নিয়মিত আরো তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে কানেক্ট থাকুন
ফেসবুকে আমরা ঃ www.fb.com/ittips
ধন্যবাদ।
১. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা সিএ ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
আপনি যে দেশ থেকেই সিএ ডিগ্রি অর্জন করুন না কেন, পৃথিবীর সব দেশেই পেশাজীবনে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিরাট আকারের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোতে সিএ ডিগ্রিধারীদের কাজের সুযোগ আছে। যেহেতু পৃথিবীজুড়েই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী সিএ ডিগ্রিধারী পেশাজীবীদের চাহিদা আরও বাড়বে।
২. কোথায় আছে কাজের সুযোগ?
সিএ ডিগ্রিধারীরা সরকারি, বেসরকারি ও বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জায়গা পান। নামীদামি বহুজাতিক কোম্পানি, এনজিও থেকে শুরু করে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, তৈরি পোশাক নির্মান ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন কোম্পানিগুলোতে সিএ ডিগ্রিধারী পেশাজীবীদের বহুমাত্রিক কাজের সুযোগ আছে। যেহেতু সিএ পেশাদার সনদ, সেহেতু আপনি এই ডিগ্রি অর্জন করলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও নীতিনির্ধারণী পদে সাবলীলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স ও আর্থিক প্রশাসন ইত্যাদি বিভাগে সিএ ডিগ্রিপ্রাপ্তরা কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী িহসেবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
৩. বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে কি?
বাংলাদেশ থেকে সিএ ডিগ্রি অর্জনের পরে ইচ্ছে করলে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আবেদন করতে পারেন। সিএ ডিগ্রিধারীরা পিএইচডি পর্যায়ে সরাসরি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি ও ফেলোশিপ নিয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এ ছাড়া ভিনদেশে দু’ একটি বিষয়ে আলাদা পরীক্ষা দিয়ে চাইলে সে দেশের সিএ ডিগ্রি অর্জন করা যায়।
৪. সিএ কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা কী কী?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পরই সিএ কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যায়। সে ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে জিপিএ–৫সহ ন্যূনতম ৯ পয়েন্ট থাকতে হয়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও সিএ কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ও-লেভেলে সর্বনিম্ন ৫ বিষয় কিংবা সর্বোচ্চ ৭ বিষয় মিলিয়ে ন্যূনতম ৩৮ পয়েন্ট থাকতে হবে। এ লেভেলে ৩ বিষয়ে ন্যূনতম ১২ পয়েন্ট পেতে হবে ভর্তির জন্য। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান কিংবা মানবিক বিষয়ে স্নাতক অথবা মাস্টার্স শেষে আবেদন করার ক্ষেত্রে উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে।
৫. অনেকে বলেন, সিএ কোর্সে পড়াশোনা শেষ করতে অনেক বেশি সময় লাগে, পড়াও বেশ কঠিন। সত্যিই কি তাই?
নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে থাকলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সিএ ডিগ্রি অর্জন করা যায়। যেহেতু সিএ ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা পুরোটাই ব্যবহারিক ও প্রতিযোগিতামূলক, সেহেতু এখানে পড়াশোনার একটু বেশি চাপ থাকে, এটা সত্যি। আন্তর্জাতিক মানের একটা ডিগ্রি পেতে হলে এই পরিশ্রম তো করতেই হবে।
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত পড়ালেখার সঙ্গে সিএর পার্থক্য কী?
এটি একটি পেশাদার ডিগ্রি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চেয়ে এর পরিধি ও মাত্রা বেশ গভীর। সিএ ডিগ্রির কোর্স ও কারিকুলাম আন্তর্জাতিক মানের বলে ব্যবহারিক জ্ঞানকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সব শিক্ষার্থীকে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষা ও পড়াশোনার মধ্য দিয়ে সিএ ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। সিএ পড়তে চাইলে প্রথমে যুক্ত হতে হবে আইসিএবি নিবন্ধিত কোনো সিএ ফার্মের সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাতে-কলমে কাজের সুযোগ থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করানো হয়। নতুন শিক্ষার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রথমেই একটি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় মূলত মৌলিক হিসাববিজ্ঞান ও ইংরেজির ওপর প্রাথমিক দক্ষতা যাচাই করা হয়। সিএ ডিগ্রির পড়াশোনা পুরোটাই ইংরেজি ভাষায়। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় প্রাথমিক ভাষাগত দক্ষতা থাকা জরুরি।
৭. সিএ কোর্সে ইন্টার্নশিপ কিংবা থিসিস অন্তর্ভুক্ত আছে কি?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা থিসিসকে জোর দেওয়া হয়। সিএ ডিগ্রি যেহেতু পেশাগত সনদ, সে ক্ষেত্রে ‘আর্টিকেলশিপ’ বলে একটি বিষয় প্রচলিত আছে। আর্টিকেলশিপ হলো, সিএ পড়াকালীন আপনাকে ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য কোনো সিএ ফার্মের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। একাডেমিক ডিগ্রির ক্ষেত্রে পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চাইলে আপনাকে শুরু থেকেই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে যুক্ত থাকতে হবে।
৮. কোর্স শেষ করতে কেমন খরচ হয়?
সিএ কোর্সে মোট তিনটি ‘লেভেল’ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে নলেজ লেভেল, অ্যাপ্লিকেশন লেভেল ও অ্যাডভান্সড স্টেজ লেভেল। নলেজ ও অ্যাপ্লিকেশন লেভেলে পড়তে হবে সাতটি বিষয়, অ্যাডভান্সড লেভেলে তিনটি বিষয়। সিএ কোর্সে ভর্তি থেকে শুরু করে সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়।
৯. বৃত্তি, ফেলোশিপ বা অন্য কোনো আর্থিক সহযোগিতা লাভের সুযোগ আছে কি?
আর্টিকেলশিপে থাকার সময়ে একজন শিক্ষার্থী সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাতা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিএবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। সিএ ডিগ্রি অর্জনের পরে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি ও ফেলোশিপ লাভের সুযোগও আছে।
১০. সিএ কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত কোথায় জানা যাবে?
সিএ ডিগ্রি ও কাজের সুযোগ জানতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আইসিএবি ভবন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ছাড়া আইসিএবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.icab.org.bd থেকেও খোঁজ নিতে পারেন।
ফেসবুকে আমরা ঃ www.fb.com/ittips
ধন্যবাদ।